Hemp fiber
মাদক বা গাজা এই নামটি কে না জানে,
আপনি কি অবাক হবেন না, যদি জানতে পারেন এমন ই এক নেশা জাতক দ্রব্য থেকে কাপড় তৈরি হয়!?🤔
চলুন বস্ত্র খাতে যুক্ত হওয়া এমন ই এক ফাইবার "Hemp" এর রাজ্যে একটু ঢু মেরে আসি😌
আলোচনার সুবিধার্থে এবং সহজে যেনো বোধগম্য হয় সেই লক্ষ্যে সমস্ত বিষয়কে কয়েকটা সহজ প্রশ্নের মধ্যে আনার চেষ্টা করেছি। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি,,,,,
.jpeg)
☸❋⁕ যেহেতু গাজার সাথে "Hemp " শব্দটার একটা মিল দেখিয়েছি তাই চলুন প্রথমে জেনে নেই "Hemp " আসলে কি?😇
✓"Hemp" একটি শণ জাতীয় উদ্ভিদ বা প্রাকৃতিক সেলুলোজিক বাস্ট অর্থাৎ ছালজাতীয় ফাইবার। ইহা উদ্ভিদের বাকল বা ছাল থেকে সংগ্রহ করা হয় । বৈজ্ঞানিক ভাবে একে ক্যানিবিস ( Cannabis ) নামে ডাকা হলেও বাণিজ্যিক ভাবে এটি ম্যানিলা হেম্প (Manila hemp) নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
.jpeg)
* এবার নিশ্চয় ভাবছেন শণ বলতে আসলে কি বুঝানো হচ্ছে? 🤔
আচ্ছা ঠিক আছে আরেকটু সহজ করে বলি,,,,
∆ শণ : এই ক্যানাবিস নামক উদ্ভিদ কে যখন ড্রাগ বা ড্রাগের উদ্দেশ্যে রোপণ করা হয় তখন একে "শাস" নামে ডাকা হয় আবার যখন শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয় তখনি মূলত "শণ" শব্দটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
☸❋⁕আচ্ছা তাহলে কে বা কারা এই "গাঁজা" বা "হেম্প" খুঁজে পেয়েছিল ? 🙄
✓ নির্দিষ্ট করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্পর্কে জানা না গেলেও এতটুকু জানা গেছে প্রায় ১২০০০ বছর আগে থেকে এই হেম্প ফাইবার কে টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উৎপত্তির এক বিশাল ইতিহাস আছে জানার আগ্রহ ঠাকেল চলুন একটু চোখ বুলিয়ে আসি ।জাপানের নিকটবর্তী ওকি দ্বীপপুঞ্জের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রায় ৮০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে Hemp Achenes ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে হেম্প এর ব্যবহার চীনের নিওলিথিক যুগের সাথে সম্পর্কিত, ৫ম সহস্রাব্দ থেকে ইয়াংশাও সংস্কৃতির মৃৎশিল্পে হেম্প ফাইবার এর ছাপ পাওয়া গেছে। চীনারা পরে জামা, জুতো, দড়ি এবং কাগজের একটি প্রাথমিক রূপ তৈরি করতে হেম্প ব্যবহার করত । টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ওয়েল্যান্ড বারবার এর মতে "ইউরোপ (জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, ইউক্রেন) থেকে পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত (তিব্বত এবং চীন), সমগ্র উত্তর অক্ষাংশ জুড়ে নওলিথিক যুগে হেম্প এর চাষ বৃদ্ধি পেয়েছিল।”
ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় শতাব্দীতে বসবাসকারী ইহুদিরা হেম্প চাষের সাথে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ইউরোপে প্রধানত হেম্প এর চাষ করা হত ক্রিস্টোফার কলম্বাস সহ অনেকের জাহাজের দড়ি তৈরির জন্য। স্পেনীয়রা আমেরিকাতে হেম্প নিয়ে এসেছিল এবং এটি চিলিতে প্রায় ১৫৪৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। পেরু, কলম্বিয়া এবং মেক্সিকোতে একই রকম চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে কেবল চিলিতেই এই শস্য সাফল্য পেয়েছিল। ১৬০৫ সালের জুলাইয়ে, স্যামুয়েল চ্যাম্পলাইন কেপ কডের লোকেরা ঘাস এবং হেম্প এর পোশাক ব্যবহার করার কথা জানিয়েছিল। ১৬০৭ সালের মে মাসে, ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে অবস্থিত মূল পোহাতান গ্রামে স্থানীয়দের দ্বারা চাষ করা ফসলগুলির মধ্যে হেম্প ছিল, এবং ১৬১২ সালে সামুয়েল আরগাল বন্য রিপোর্ট করেছিলেন উপরের পোটোম্যাকের তীরে হেম্প এর বৃদ্ধি ইংল্যান্ডের চেয়ে ভাল। পিউরিটিয়ানরা প্রথম ইংল্যান্ডে ১৬৪৫ সালে হেম্প চাষ করেছিলেন বলে জানা যায়।
*অনেক হয়েছে🤨এবার থামেন।।🚏
এতো ইতিহাস জেনে কি হবে!?গাঁজাখুরি গল্প জুড়েছে🤦
∆ কি আর করার আজকের টপিক ই তো গাঁজা তাই কিছুটা গাঁজাখুরি গল্প তো হজম করতেই হবে!🤭
☸❋⁕ যা হোক এবার নিশ্চয় বলবেন টেক্সটাইলের সাথে এর কি সম্পর্ক? "তার থেকে বরং বন্যরা বনে সুন্দর, আর হেম্প ঔষধ শিল্পে!"🥴
✓মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য যেমন মনের মাঝেই অন্তর্নিহিত থাকে ঠিক তেমনি হেম্প এর সৌন্দর্য টেক্সটাইলেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। আমি চাপার জোড়ে বলছি না,পুরো লিখাটা পড়ার পর হয়তো আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন। কিছুদিন আগে মেডিকেল সেক্টরে যখন এই হেম্প গাছ এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে ঔষধ তৈরি করা হয়েছে ঠিক তখনি হেম্প গুরুত্ব প্রমানিত হয়েছে ।তবে এই হেম্প গাছ থেকে প্রাপ্ত হেম্প ফাইবার টেক্সটাইল শিল্পে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কেননা হেম্প ফাইবার হয়ে থাকে খুব বেশি শক্তিশালী এবং এটি একটি উন্নত মানের টেক্সটাইল ফাইবার।হেম্প ফাইবারের প্রধান ব্যবহার হলো দড়ি, কার্পেট, নেট এবং স্যাকিং গ্রাহেম্প টেপস্ট্রি, টুপি, শাল এবং তোয়ালে তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। হাঙ্গেরিতে যে হেম্প ফাইবার উৎপন্ন হয় তা রঙ্গিন গালিচা বুনন, ক্রোশেট এবং অন্যান্য নৈপুণ্যের আইটেম তৈরির জন্য উপযুক্ত। জুতা, কাগজ, বায়োপ্লাস্টিকস, ইনসুলেশন এবং জৈব জ্বালানিসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও শিল্পজাতীয় পণ্য তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। বেস্ট ফাইবারগুলি ১০০% হেম্প টেক্সটাইলগুলি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পোশাক এবং আসবাবের জন্য কাপড় তৈরি করতে হেম্প এর সাথে সাধারণত সুতি বা রেশম এবং পুনর্ব্যবহৃত পলিয়েস্টার মিশ্রিত হয়। উদ্ভিদটির অভ্যন্তরীণ দুটি তন্তু কাঠের হয়। যখন অক্সিডাইজড বীজ থেকে তেল বের হয় যা তেল-ভিত্তিক পেইন্টস, ময়শ্চারাইজিং এজেন্ট হিসাবে ক্রিম, রান্নার জন্য এবং প্লাস্টিক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
☸❋⁕ আপনি যে সব সুবিধার কথা বলছেন সে সব সুবিধা তো অন্য যে কোন টেক্সটাইল ফাইবার থেকেই পেতে পারি!কেনো হেম্প কেই বেছে নিবো!?🥱
✓আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটি জীবকে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েই প্রেরণ করেছেন চলুন এমনি হেম্প এর কিছু ভৌত এবং রাসায়নিক গুণাবলী থেকে এর অনন্যতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি!
**হেম্প ফাইবারের ভৌত গুণাবলী:
দৈর্ঘ্য: হেম্প ফাইবারের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪ থেকে ৬.৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ব্যাস: হেম্প ফাইবারের বেশ ২২ মাইক্রোন পর্যন্ত হয়।
শক্তি: হেম্প ফাইবার অন্যান্য ফাইবারের তুলনায় খুব বেশি শক্তিশালী।
আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা: আদ্রতা ধারণক্ষমতা ১২%।
রং: হলুদ,ধূসর থেকে গাঢ় বাদামি হয়ে থাকে।
তাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা: হেম্প ফাইবারের তা প্রতিরোধ ক্ষমতা মোটামুটি ভালো।
আপেক্ষিক গুরুত্ব: ১.৪৮ থেকে ১.৫০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
**হেম্প ফাইবারের রাসায়নিক গুণাবলী:
ব্লিচের ক্রিয়া: ব্লিচের ক্রিয়ার ফলে ফাইবারের শক্তি কমে যায়।
অ্যালকালিতে ক্রিয়া: হেম্প ফাইবারে শক্তিশালী অ্যালকালিতে ও ক্ষতি হয় না।
এসিডের ক্রিয়া: শুধুমাত্র শক্তিশালী এসিড ও ক্ষতি হয়।
আলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা: হেম্প ফাইবারের আলোর প্রতিরোধক্ষমতা ভালো।
কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা: সাধারণত হেম্প ফাইবারে কীটপতঙ্গে আক্রান্ত হয় না।
মিলাডিউর প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভালো।
*আমি জানি আপনি এখনো হেম্প এর উপকারিতা সম্পর্কে সন্ধিহান!😒
চলুন আরেকটু বিস্তারিত জেনে আসি,,,
• হেম্প চাষ এবং প্রয়োগের উভয় ক্ষেত্রেই অন্যান্য প্রাকৃতিক ফাইবারগুলির তুলনায় উন্নতমানের হয়ে থাকে।
• হেম্প চাষে তুলার তুলনায় কম উপাদান এবং কম পানির প্রয়োজন।
•শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হেম্প পোকামাকড় এবং রোগ প্রতিরোধী যার ফলে এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
•কম লিগনিন স্তরগুলি ক্লোরিন ছাড়াই ব্লিচ করা যায়, যার ফলে এটি পরিবেশ বান্ধব।
• একই পরিমাণ জমি ব্যবহার করে তুলার চেয়ে বেশি পরিমানে হেম্প ফাইবার সংগ্রহ করা যায়।
•এটি অন্যতম শক্তিশালী প্রাকৃতিক তন্তু।
•এটি কম প্রসারিত হয়, তাই পোশাক তার আকৃতি ধরে রাখে।
•হেম্প ফাইবার থেকে উৎপন্ন কাপড়ের কোমলতা এর ব্যবহারের সাথে বৃদ্ধি পায়।
• এটি তুলোর চেয়ে ভালোভাবে রঙ ধরে রফাখতে পারে।যার ফলে পোশাক এর রঙ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম•এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যুক্ত।
•উচ্চ ঘর্ষণ প্রতিরোধী।
• ছাঁচ এবং জীবাণু প্রতিরোধী।
• এর সুপরিয়র UV ব্লক করা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন হেম্প সত্যই কতোটা উপকারী!😌
∆জ্বি অনেক উপকৃত হলাম!
☸❋⁕ এই হেম্প তো বনে হয় হয়তো ! বাণিজ্যিক ভাবে কে ই বা এটি চাষ করবে!?🌝
✓অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৩০ টিরও বেশি দেশে শন বা হেম্প উৎপাদন করা হয়ে থাকে😲। তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, ডেনমার্ক, মিশর, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেন এবং বাংলাদেশ অন্যতম । তবে হ্যাঁ তারা বাণিজ্যিক ভাবে এই হেম্প চাষ করে মূলত টেক্সটাইল খাতকে আরো উন্নত কারার লক্ষ্যে 😇
সর্বোপরি হেম্প বা গাঁজা নাম টা শুনলে অনেকেই হয়তো আড়চোখে তাকাতেন কারণ এটি একদিকে সামাজিক বিপজ্জয়ের কারণ অন্যদিকে ধর্মীয় দিক থেকে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমার বিশ্বাস আপনি উপরোক্ত লিখা যথাযথ ভাবে পড়লে অবশ্যই হেম্প এর রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন। হেম্প বা গাঁজার ক্ষতিকর দিক তো সবারই জানা আমি না হয় ভালো দিকগুলোই তুলে ধরলাম। হেম্প কে হয়ত এতক্ষণে চিনে গিয়েছেন। তাই আবার বইলেন না এই নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে টেক্সটাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট এ লিখা কেনো?
হেম্প ফাইবার পোশাক শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাঁচামাল। ভবিষ্যতে আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস!! যে কোনো ধরনের আলোচনা এবং গঠনমূলক সমালোচনা সদরে গৃহীত হবে।
✍️কলমে :
আশিকুর রহমান (আশিক)
নিটার ১১ তম ব্যাচ।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ,বিভিন্ন টেক্সটাইল ম্যাগাজিন,টেক্সটাইল ব্লগ।
.jpeg)
.jpeg)
Comments
Post a Comment